Wednesday, March 21, 2018

নারীদের উপর যৌন নির্যাতন বন্ধ হোক

একজন নারী যখন ঘর থেকে বের হয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখেন তখন পাড়ার ছেলে, বখাটে থেকে শুরু করে নিজের মা বাবা, স্বামী সবাই সে স্বপ্নটি দেখা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেন।
একজন নারীর বিশাল স্বপ্ন থাকতে পারে কিন্তু সেই স্বপ্ন শুনার কেউ থাকে না।
অর্পিতা খানম


ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে এরকম হাজারো স্বপ্ন যখন বাবা মা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তখন এককোণে অবলা মেয়েটার কথা হালকা মনে পড়েলেও তা ক্ষনিকের কারন মেয়ের প্রতি এত আশা কখনো রাখেন না তারা। কি হবে পড়ালেখা করে? কোন মত এইচএসসি পাশ করলেই কোন এক ছেলের ঘাড়ে ফেলে দেওয়ার চিন্তায় ব্যাস্ত হয়ে পড়েন তারা।

এরই মধ্যে মেয়েরা ডাক্তার হয়, ইঞ্জিনিয়ার হয়। কখনো কি ভেবেছেন- এই ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া মেয়েগুলো জীবনের কোথাও না কোথাও কোন না কোন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন?

কখনো কি ভেবেছেন- এই নারীগুলোই চাকরি করে এসে বাসার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অথচ পুরুষরা টাই খোলেই জুতা নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে?

এই নারীগুলোই শশুর-শাশুরী, সন্তানের দেখাশুনার পাশাপাশি চাকরি করে তারপরও আপনার খেয়াল রাখতে মোটেও ভুলে না অথচ একজন ছেলে? চাকুরি করতেই হাপিয়ে উঠে।

আমি বলছি না- পুরুষরা মেয়েদের চেয়ে কম কাজ করে তবে বেশি নয় হতে পারে সমান।
সেক্ষেত্রে একটা মেয়েকে কেন অবহেলা এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়?

এই অবহেলা বা নির্যাতন শুধু বাংলাদেশে নয়। পুরো বিশ্বেই নারীরা একরকম অবহেলিত, নির্যাতিত। তবে হ্যা- কিছুটা উন্নতি হচ্ছে তবে প্রত্যাশাসরুপ নয়।

এত এত কাজ, অবহেলার, নির্যাতনের মধ্যেও একটি মেয়েকে যে দুঃস্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠতে হয় সেটি হচ্ছে যৌন নির্যাতন। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও যৌন নির্যাতন হচ্ছে।  আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে ইউনিসেফের রিপোর্ট বলছে-

১) ২০টি দেশে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে ১০জন নির্যাতিত মেয়ের মধ্যে ৯জন মেয়েই জোড়পূর্বক প্রথম যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে যখন তারা কিশোরী ছিলেন।
২) ২৮টি দেশের জরিপ বলছে ১০জন নির্যাতিতার মধ্যে ৯ জনই পরিচিত মানুষ দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার।
৩) তাদের মধ্য থেকে ১% নারী প্রফেশনাল হেল্প চাইতে গিয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
ইউনিসেফের ডাটা লিংক: Unicef Data of women sexual violence


দ্বিতীয় জরিপে বাংলাদেশ:

কিছুদিন আগে একটি মেয়ে তার নিজ বাবা দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নামে শিরোনাম দেখে আমি শিউরে উঠেছিলাম। তনু, রুপা এদের মত বহু সংখ্যক নারী শুধুমাত্র যৌন লালসার শিকার হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় হয়েছেন এবং এদের খবর আমরা জানি কিন্তু যে মেয়েটি নিজের বাবা দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন সে মেয়ের কথা হয়তো অপ্রত্যাশিত বা কোন কারণে আমরা জেনে গেছি কিন্তু এরকম আরও বহু নির্যাতন আছে যেগুলো আমরা সহসা জানিনা। যে মেয়েগুলো বাবা, মামা, খালু, দাদা, নানা ইত্যাদি মানুষগুলো দ্বারা আক্রান্ত হয় তারা তো ভেবেই নিতে পারে যে- পৃথিবীটা তাদের জন্য নয়।


নারীরা যা চায়:

একজন নারী কখনোই পুরুষদের মত চিন্তা করে না। একজন নারী যৌন নির্যাতনের আগ পর্যন্ত পুরুষদের নিজেদের মত করে সহজ সরল দৃষ্টিতেই ভাবতে থাকে কিন্তু যখনই তারা নির্যাতনের শিকার হয় তখন তাদের এই চিন্তার আমুল পরিবর্তন হয়।  তাদের মনে হতে থাকে- পৃথিবীটা নারীদের জন্য এক রকম আর পুরুষদের জন্য আরেক রকম।
নারীরা কখনোই চায়না- এরকম পৃথিবীটা ভাগ হয়ে যাক বরং পুরুষদের মত তারাও নিরাপদ বিচরণ করতে চায়।

আমি কখনোই আশাহুত হইনা। এক সময় পৃথিবীটা বদলাবে। নারী পুরুষ সবাই সমানতালে এগিয়ে যাবে। নারীদের উপর শুধু যৌন নির্যাতন নয় বরং যেকোন নির্যাতন বন্ধ হবে।


লেখিকা-
অর্পিতা খানম
বিবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments:

Post a Comment